ধর্ম ডেস্ক: দাম্পত্য জীবনের অনুপম আদর্শ রেখে গেছেন আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ জন্য তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম হলো সে, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম। তোমাদের এ সঙ্গী (অর্থাৎ আমি) যখন মারা যাবে, তার জন্য তোমরা দোয়া করবে।
(জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৯৫)
প্রিয় নবীজি (সা.) তাঁর স্ত্রীদের ছোট ছোট বিষয়ও ভালোভাবে পরখ করতেন। যেগুলো আমাদের কল্পনায় আসে না, সেসব বিষয় তিনি বাস্তবায়ন করে আমাদের জন্য নজির রেখে গেছেন। কোন জিনিস স্ত্রীদের পছন্দ আর কোন জিনিস অপছন্দ, কোন জিনিসে স্ত্রী সন্তুষ্ট হতেন, আর কিসে অসন্তুষ্ট হতেন, সেসব বিষয়ে তিনি খুব ভালোভাবে লক্ষ রাখতেন। আমাদের প্রিয় নবীর দাম্পত্য জীবনের চেয়ে সুন্দর আদর্শ পৃথিবীতে আর কেউ দেখাতে পারবে না।
প্রিয় নবী (সা.) নিজ স্ত্রীর আবেগের মূল্যায়ন করতেন।
একদিন প্রিয় নবী (সা.) আয়েশা (রা.)-কে বলেন, তুমি কখন আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকো আর কখন অসন্তুষ্ট থাকো তা আমি ভালো করে জানি। বর্ণনাটি সহিহ বুখারিতে এসেছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেন, আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশি থাকো এবং কখন রাগান্বিত হও। আমি বললাম, কী করে আপনি তা বুঝতে সক্ষম হন? তিনি বলেন, তুমি সন্তুষ্ট থাকলে বলো না! মুহাম্মদ (সা.)-এর রবের কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ বা রাগান্বিত থাকলে বলো না! ইবরাহিম (আ.)-এর রবের কসম! শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন।
আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসুল! সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২২৮)
নবীজি (সা.)-এর এত ব্যস্ততা, এত দায়িত্ব থাকার পরও স্ত্রীদের অধিকার, তাদের ছোট ছোট আবেগ-অনুভূতি কী পরিমাণ সযত্নে লক্ষ্য করতেন, তা এই হাদিস থেকে অনুমেয়। আর আয়েশা (রা.)-এর এমন আচরণের কারণে বা এভাবে রাসুলের নাম না নেওয়ার কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) বিন্দুমাত্র বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেননি। যিনি দোজাহানের সর্দার, যাঁকে সব কিছুর নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর এমন আচরণ—এভাবে তিনি বিষয়টি ভাবেননি। অথচ তিনি কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না।
এর পরও তিনি তাঁর স্ত্রীদের ভালো-মন্দের প্রতি পূর্ণভাবেই লক্ষ রাখতেন। অথচ আমরা একটু সামান্য ব্যস্ততা কিংবা কোনো অজুহাতে স্ত্রীদের বড় বড় অধিকার হরণ করে থাকি, তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। অথচ আমার নবীজি বিশ্বনবী (সা.)-এর আদর্শ আদৌ এ রকম নয়।
স্ত্রীকে সান্ত্বনা
আনাস (রা.) বলেন, সাফিয়্যা (রা.)-এর কানে পৌঁছে যে হাফসা (রা.) তাঁকে ইহুদির মেয়ে বলে ঠাট্টা করেছেন। তাই তিনি কাঁদছিলেন। তাঁর ক্রন্দনরত অবস্থায় নবী (সা.) তাঁর ঘরে প্রবেশ করেন। তিনি বলেন, কী কারণে তুমি কাঁদছ? তিনি বলেন, হাফসা আমাকে ইহুদির মেয়ে বলে তিরস্কার করেছেন। নবী (সা.) বলেন, অবশ্যই তুমি একজন নবীর কন্যা, তোমার চাচা অবশ্যই একজন নবী এবং তুমি একজন নবীর সহধর্মিণী। অতএব কিভাবে হাফসা তোমার ওপরে অহংকার করতে পারে? তারপর তিনি বলেন, হে হাফসা! আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৯৪)
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.